ঢাকা,শুক্রবার, ৩ মে ২০২৪

লামায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়: শ্রেণীকক্ষ ও ভবন সংকটে ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষা কার্যক্রম

মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম, লামা ::

লামা উপজেলার রুপসীপাড়া ইউনিয়নের দুর্গম কলারঝিরি মংপ্রু পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবন না থাকায় শ্রেণীকক্ষ সংকটে শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। পুরাতন টিনসেট জরাজীর্ণ ঘরে বর্ষায় বৃষ্টিতে ভিজে ও পরিত্যক্ত ভবনে ঝুঁকি নিয়ে চলছে পাঠদান। বেশ কয়েকবছর আগে উপজেলা শিক্ষা অফিস কর্তৃক টিনসেট ঘরটি ব্যবহার অনুপযোগী ঘোষনা করলেও এখনো নতুন ভবন নির্মাণে কোন উদ্যোগ না দেখে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন এলাকাবাসি ও অভিভাবকরা। পশ্চাৎপদ ও সুবিধাবঞ্চিত দুর্গম এলাকায় শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিতে দ্রুত নতুন ভবন নির্মাণ করতে পার্বত্য মন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি থোয়াইহ্লা মং মার্মা।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা ক্যচিংমে মার্মা জানান, ১লা জানুয়ারী ১৯৯০ইং সালে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা হয়। প্রতিষ্ঠাকালীন সময়ে তৈরি টিনসেট ঘরটিতে এখনো শিক্ষা কার্যক্রম চলছে। দুর্গম এলাকা হওয়ায় ও আগে যোগাযোগ ব্যবস্থা না থাকায় পাঁকা ভবন করা হয়নি। বর্তমানে পার্বত্য মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং এমপি এর প্রচেষ্টায় এলাকায় যোগাযোগ ব্যবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। সেই সাথে বিদ্যালয়ে বেড়েছে শিক্ষার্থীর সংখ্যা। বেসরকারি বিদ্যালয় হিসেবে স্কুলটি যাত্রা শুরু করলেও ২০১৩ সালের ১লা জানুয়ারী বিদ্যালয়টি জাতীয়করণ করা হয়। বর্তমানে স্কুলে ৫টি সৃষ্ট পদের অনুকূলে ৪জন শিক্ষক এবং স্কুল মিল প্রোগ্রামে ২জন রাঁধূনী কর্মরত আছে। স্কুলে শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ২ শতাধিক। আর কোন রুম না থাকায় বাধ্য হয়ে পরিত্যাক্ত ভবনে জীবন ঝুঁকি নিয়ে ক্লাস করতে হচ্ছে। ঝড়-বৃষ্টি হলে স্কুল ছুটি দিয়ে দিতে হয়। ২০১৮ সালের সমাপনী পরীক্ষায় শতভাগ শিক্ষার্থী পাশ করেছে।

বিদ্যালয়ের ৫শ শ্রেণীর শিক্ষার্থী অংচিং মার্মা, শহর বানু, ৪র্থ শ্রেণীর শিক্ষার্থী খই¤্রাচিং মার্মা, ও ৩য় শ্রেণীর শিক্ষার্থী উখ্রিং মার্মা, মেগাচিং মার্মার সাথে আলাপকালে তারা বলে, বিদ্যালয়ে শ্রেণী কক্ষে বসে ক্লাস করতে আমাদের ভয় লাগে। অত্র বিদ্যালয়টি খুবই নড়বড়ে ও জরাজীর্ণ। যে কোন সময় ভেঙ্গে পড়ে যেতে পারে। সবার স্কুল সুন্দর আমাদের স্কুল ভাঙ্গা। স্কুলের ৩টি শ্রেণীকক্ষ নষ্ট। এছাড়া ক্লাসে বেঞ্চ টেবিল পরিমাণ মত নেই। অনেক ছাত্র-ছাত্রী দাঁড়িয়ে ক্লাস করে।

বিদ্যালয়ের জমিদাতা মৃদুমা মার্মা বলেন, স্কুলের ১ একর জায়গা রয়েছে। পুরাতন ভবনটি নষ্ট হয়ে গেছে। নতুন ভবন করা প্রয়োজন।

অভিভাবকরা জানায়, ঝুঁকিপূর্ণ এসব বিদ্যালয়ের বিষয়টি বারবার উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেও কোন সমাধান পাননি তারা। তাদের দাবি অনতিবিলম্বে স্কুলে নতুন ভবন তৈরি করে স্বাভাবিক পাঠদানের পরিবেশ নিশ্চিত করা হউক।

রুপসীপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান ছাচিং প্রু মার্মার কাছে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, পর্যাপ্ত শ্রেণীকক্ষ না থাকায় নিরুপায় হয়ে ঝুঁকিপূর্ণ কক্ষে লেখাপড়া চালিয়ে যেতে হচ্ছে। বিদ্যালয়ের বেহাল অবস্থা সর্ম্পকে আমাদের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। কোমলমতি শিক্ষার্থীদের কথা মাথায় রেখে ঝুুঁকিপূর্ণ ভবন ভেঙ্গে নতুন ভবণ নির্মাণ করা খুবই জরুরী।

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার যতীন্দ্র মোহন মন্ডল বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে শ্রেণী কার্যক্রম পরিচালনা না করতে বলা হয়েছে। নতুন ভবন তৈরি করতে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রস্তাবনা দেয়া হয়েছে।

উপজেলা প্রকৌশলী কর্মকর্তা নাজিম উদ্দিন বলেন, লামার ৮টি বিদ্যালয়ের নতুন ভবনের অনুমোদন পেয়েছি। এখন শুধু পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ ও ঠিকাদার নির্বাচনের কাজ বাকী আছে। অচিরে ভবন গুলোর কাজ শুরু হবে।

উল্লেখ্য, উপজেলা আরো ১১টি বিদ্যালয়ে ভবন সংকটে শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।

পাঠকের মতামত: